আমরা প্রতিদিন রুটিন অনুযায়ী যেসব শব্দ ব্যাবহার করি তার মধ্যে একটা শব্দ টেকনোলজি, যেমন, অনেকে বলে থাকেন “টেকনোলজি” এই জেনারেশনটাকে শেষ করে ফেলল। তারা আসোলে বুঝান যে টিনেজাররা ফোন ব্যাবহার করে তাদের পড়াশুনার সময় শেষ করল! আবার বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশ টেকনোলজি ব্যাবহারে এগিয়ে যাচ্ছে, দেশে চার চারটা সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তাহলে এই শব্দের মানেটা কি আসোলে?
টেকনোলজির বাংলা তথ্য প্রযুক্তি। উইকিপিডিয়ার মতে টেকনোলজি হল প্রয়োগকৌশল, দক্ষতা, কার্যপদ্ধতি এবং প্রক্রিয়ার সমষ্টি যা ব্যাবহার করে মানুষের ভোগান্তি কমিয়ে আনা যায়, কিংবা মানুষের ভাল অথবা খারাপের জন্য ব্যাবহার করা যায়।
AD: ঘরে বসে ”গ্রাফিক ডিজাইন” শিখুন (অনলাইন কোর্স)
আমরা সাধারণত টেকনোলজি বলতে যেকোনো ধরণের মেশিন অথবা ডিভাইস মনে করি, যার শারিরীক অস্তিত্ব আছে। কিন্তু টেকনোলজি একটা আইডিয়া বা ধারণা, যার শারিরীক অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে, যেমন, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোনের অ্যাপস ইত্যাদি। তাহলে আমরা বলতে পারি টেকনোলজি এমন একটা আইডিয়া যেটা আমরা সচরাচর ব্যাবহার করে থাকি প্রতিদিনের কাজে। প্রতিদিন সকালে বেসিনের কল ছাড়া থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা যা ব্যাবহার করছি প্রায় সবই টেকনোলজি। একভাবে বলা যায় আগুন ধরানোর কৌশল মানুষের আবিষ্কৃত প্রথম টেকনোলজি। চাকার আবিষ্কার থেকে শুরু করে আজকের নিউক্লিয়ার বোমা, নিজেদের মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে রকেট পর্যন্ত সবই টেকনোলজি। আমরা ফোনে যেসব অ্যাপস ব্যাবহার করি অথবা গেইমস খেলি এসবই টেকনোলজি। টেকনোলজি কে যেকোন একটা পর্যায়ে সীমাবদ্ধ করা যায়না। শুধু কোন ডিভাইসকেই টেকনোলজি বলা চলেনা, ওই ডিভাইস যেভাবে বা যেই প্রোগ্রাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে সেটাও টেকনোলজি।
গত শতাব্দী থেকে টেকনোলজি উদ্ভাবন ও ব্যাবহারে বিপ্লব ঘটেছে। এমন অনেক কিছু আবিষ্কৃত হয়েছে যেটা আগে কখনো কেউ কল্পনাও করেনি যেমন রকেট সায়েন্স। আগামীতেও এমন অনেক টেকনোলজি আসবে যা আমরা এখনো বাস্তবচিত্রে কল্পনা করতে পারছিনা। কিছুদিন আগে নাসা ঘোষনা দেয় তারা উবারের সাথে একটি প্রজেক্ট হাতে নেয় যাতে তারা ” ফ্লাইং কার” তৈরী করবে এবং সেগুলো কমার্শিয়ালি, ব্যাস্ত শহরগুলোতে ব্যাবহার করবে। আপাতত যেটার নাম তারা দিয়েছে “উবারএয়ার”। এই এয়ার ভেহিকেল গুলো মাটিথেকে ৫০০ ফিট উপরে চলাচল করবে। আর এই ভেহিকেল গুলোর জন্য এয়ার ট্রাফিক সিস্টেম তৈরি করবে নাসা।
AD: কমপ্লিট অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কোর্স
২০১৭ সালেই টেকনোলজিতে কতগুলো মেজর ব্রেকথ্রু হয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রিভার্স প্যারালাইসিস, যাতে ব্রেন ইমপ্ল্যান্টেশনের মাধ্যমে স্পাইনাল কর্ড ইঞ্জুরি দ্বারা ঘটিত প্যারালাইসিস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে; আনম্যানড ট্রাক অর্থাৎ যে ট্রাক চালানোর জন্য আর ড্রাইভারের প্রয়োজন হবেনা; ৩৬০` ডীগ্রি সেল্ফি; হট সোলার সেলস, যা দিয়ে সস্তা এবং কন্টিনিউয়াস শক্তি পাওয়া যাবে; পেয়িং উইথ ইয়োর ফেস, চায়নাতে এখন কোন কিছুর পেমেন্ট করতে হলে চেহারা পেমেন্টের জন্য অনুমোদিত কিনা সেটা যাচায় হবে এবং ক্রিমিনালদের ট্র্যাক করতে এটি সাহায্য করবে; দা সেল অ্যাটলাস; প্র্যাক্টিকাল কোয়ান্টাম কম্পিউটারস; জিন থেরাপি ২.০, যা দ্বারা যেসব জেনেটিক রোগ সমূহ চিকিৎসা করা যাচ্ছিলোনা তা এখন থেকে করা যাবে, ইত্যাদি।
উপরের সবগুলোই এক-একটি টেকনোলজির উদাহরণ। আমরা টেকনোলজিতে ডুবে আছি। প্রত্যেকটা মানুষের ক্রিয়েটিভ আইডা যেটাকে মানুষের কোন কাজে ব্যাবহার করা যাবে সেটাই। টেকনোলজি।
মানুষ স্বভাবতই তার আশেপাশের অবস্থা নিয়ে কৌতূহলী। তারা এসব অবস্থার মানে খোঁজার চেষ্টা করে, কিন্তু শুধুই মানে খোঁজাটা যথেষ্ট নয়। তাই তারা সেই অবস্থাটাকে পরিবর্তন করে নিজের অনুকূলে আনতে চায়। আর নিজের অনুকূলে আনার সরঞ্জামই হল টেকনোলজি।
লিখেছেনঃ
সুমাইয়া সামাদ স্নিগ্ধা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
Leave a Reply